এ প্রাণ, রাতের রেলগাড়ি, দিল পাড়ি-- কামরায় গাড়িভরা ঘুম, রজনী নিঝুম। অসীম আঁধারে কালি-লেপা কিছুনয় মনে হয় যারে নিদ্রার পারে রয়েছে সে পরিচয়হারা দেশে। ক্ষণ-আলো ইঙ্গিতে উঠে ঝলি, পার হয়ে যায় চলি অজানার পরে অজানায়, অদৃশ্য ঠিকানায়। অতিদূর-তীর্থের যাত্রী, ভাষাহীন রাত্রি, দূরের কোথা যে শেষ ভাবিয়া না পাই উদ্দেশ। চালায় যে নাম নাহি কয়; কেউ বলে, যন্ত্র সে, আর কিছু নয়। মনোহীন বলে তারে, তবু অন্ধের হাতে প্রাণমন সঁপি দিয়া বিছানা সে পাতে। বলে, সে অনিশ্চিত, তবু জানে অতি নিশ্চিত তার গতি। নামহীন যে অচেনা বার বার পার হয়ে যায় অগোচরে যারা সবে রয়েছে সেথায়, তারি যেন বহে নিশ্বাস, সন্দেহ-আড়ালেতে মুখ-ঢাকা জাগে বিশ্বাস। গাড়ি চলে, নিমেষ বিরাম নাই আকাশের তলে। ঘুমের ভিতরে থাকে অচেতনে কোন্ দূর প্রভাতের প্রত্যাশা নিদ্রিত মনে।
THE SERVICE of the fruit is precious, the service of the flower is sweet, but let my service be the service of the leaves in its shade of humble devotion.
আমার গোধূলিলগন এল বুঝি কাছে-- গোধূলিলগন রে। বিবাহের রঙে রাঙা হয়ে আসে সোনার গগন রে। শেষ করে দিল পাখি গান গাওয়া, নদীর উপরে প'ড়ে এল হাওয়া, ও পারের তীর, ভাঙা মন্দির আঁধারে মগন রে। আসিছে মধুর ঝিল্লিনূপুরে গোধূলিলগন রে। আমার দিন কেটে গেছে কখনো খেলায়, কখনো কত কী কাজে। এখন কি শুনি পূরবীর সুরে কোন্ দূরে বাঁশি বাজে। বুঝি দেরি নাই, আসে বুঝি আসে, আলোকের আভা লেগেছে আকাশে, বেলাশেষে মোরে কে সাজাবে ওরে নবমিলনের সাজে। সারা হল কাজ, মিছে কেন আজ ডাক মোরে আর কাজে। এখন নিরিবিলি ঘরে সাজাতে হবে রে বাসকশয়ন যে। ফুলশেজ লাগি রজনীগন্ধা হয় নি চয়ন যে। সারা যামিনীর দীপ সযতনে জ্বালায়ে তুলিতে হবে বাতায়নে, যূথীদল আনি গুণ্ঠনখানি করিব বয়ন যে। সাজাতে হবে রে নিবিড় রাতের বাসকশয়ন যে। প্রাতে এসেছিল যারা কিনিতে বেচিতে চলে গেছে তারা সব। রাখালের গান হল অবসান, না শুনি ধেনুর রব। এই পথ দিয়ে প্রভাতে দুপুরে যারা এল আর যারা গেল দূরে কে তারা জানিত আমার নিভৃত সন্ধ্যার উৎসব। কেনাবেচা যারা করে গেল সারা চলে গেল তারা সব। আমি জানি যে আমার হয়ে গেছে গণা গোধূলিলগন রে। ধূসর আলোকে মুদিবে নয়ন অস্তগগন রে-- তখন এ ঘরে কে খুলিবে দ্বার, কে লইবে টানি বাহুটি আমার, আমায় কে জানে কী মন্ত্রে গানে করিবে মগন রে-- সব গান সেরে আসিবে যখন গোধূলিলগন রে।